Montage

অতিমারি ও ছাত্রসমাজ

অতিমারি ও ছাত্রসমাজ

আমাদের সুস্থ, স্বাভাবিক ছন্দময় জীবনের ছন্দপতন ঘটল যখন হঠাৎ এক সন্ধেতে আমাদের দেশে ‘লকডাউন’ শুরু হল এক অতিমারির কারণে। আমার এই সল্পপরিসর জীবনকালে মহামারি শব্দটা বইয়ে পড়লেও, অতিমারি, লকডাউন, নিভৃতাবাস এই শব্দগুলির সঠিক অর্থ বুঝে উঠার আগেই আমরা – গোটা পৃথিবীর মানুষ পৌঁছে গেলাম বন্দিদশায়। প্রথম অবস্থায় এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে, অপ্রত্যাশিত কিছু ছুটি পাওয়া গেল, যেটা আমার একঘেয়েমি জীবন থেকে ক্ষণিকের আনন্দ দেবে। কিন্তু, এই আনন্দ অনুভূতি আমার বেশীক্ষণ স্থায়ী রইল না। আমার বাড়ির বড়দের ও আশেপাশের মানুষজনের দুশ্চিন্তা এবং ব্যাস্ততা দেখে, প্রথম বারের জন্য উপলব্ধি করতে পারলাম, আমার দেখা ভিনজাতীয় শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করার সিনেমাগুলির সাথে আমাদের বাস্তব জীবন মিলেমিশে যাচ্ছে। গোটা পৃথিবীর মানুষ তখন বিভিন্ন রকম উপায়ে এই অপরিচিত অদৃশ্য জীবাণুটির সঙ্গে মোকাবিলা করার পদ্ধতি নির্ণয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। টিভির পর্দায় তখন শুধুই মৃত্যুর মিছিল। আমার জীবন থেকে ছুটির আনন্দ উধাও হয়ে গিয়ে জমতে শুরু করেছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। এই পরিস্থিতিতেই নতুন ক্লাস এর পড়াশোনা। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অবিভাবকগন সকলে মিলেই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের ছাত্রজীবনে যাতে ছেদ না পরে, তার ব্যবস্থা করে চলেছেন নিরন্তর। এই অতি আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এক অচেনা রোগের মোকাবিলা করতে ও ত্রাতার ভূমিকায় সেই প্রযুক্তিকেই দেখা গেল।
নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীর জীবনসঙ্গী হয়ে দাঁড়াল মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের গৃহবন্দী করে রেখেও শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞানের আদান প্রদান চলতে শুরু করল। আমাদের স্বাভাভিক জীবনযাত্রা, অর্থাৎ সকালবেলায় স্কুলে যাওয়া, অসংখ্য সহপাঠীর সঙ্গে পড়াশোনা ও খেলাধুলার মাধ্যমে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠা – এখন আমাদের কাছে মধুর অতীত। আমরা স্বাভাবিক নিয়মেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি। বিদ্যালয়ের অভাব প্রতিনিয়ত আমাদের মনকে ব্যাথিত করলেও, আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসে অনেক কম সময়ে এবং কম খরচে শিখে ফেলতে পারছি এমন অনেক বিষয়, যেগুলি হয়ত শিখতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হত অনেক দিন। যেমন, ধরা যাক কোন বিদেশি ভাষা শেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হতো দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। কিন্তু এখন আমরা সেটা খুব সহজেই অবসর সময়ে দূর কোনো দেশের শিক্ষকের কাছ থেকে শিখে নিতে পারছি অনায়াসে।

এই অনলাইনের মাধ্যমে পঠন-পাঠন আমাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এই অতিমারির থেকেও রক্ষা করছে। ভাল দিকের সাথে সাথে এর অনেক মন্দ দিকও আছে। এই পদ্ধতিতে পড়াশোনার ফলে ছাত্রদের সঠিক মুল্যায়ান করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণীকক্ষে অমনোযোগী হলে শিক্ষকরা ছাত্রদের সাধারনত নানা উপায়ে মনোযোগী করার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন প্রকার একক বা দলগত কাজের মাধ্যমে পাঠ্যবিষয়কে আকর্ষণীয় করে তোলেন। কিন্তু নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতিতে তা একেবারেই সম্ভবপর নয়। শিক্ষার এক অবিছেদ্দ্য অঙ্গ হল শিক্ষামূলক ভ্রমন। অতিমারির কারনে আমরা তা থেকে বঞ্চিত। এই ভয়ঙ্কর মারণরোগের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা যে শুধু গৃহবন্দী হয়ে আছি তাই নয়, মানসিক ভাবেও আমরা এক বন্দীদশার মধ্যে দিয়ে চলছি। মাত্রারিক্ত সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে আমরা চোখের নানা সমস্যায় জর্জরিত।
ইন্টারনেট ব্যবহারের নেশা আমাদের মতো কিশোর-কিশোরীদের তো বটেই, শিশুদেরও অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাবা মায়েরা এই নেশার কবল থেকে সন্তানদের উদ্ধার করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসক, বিজ্ঞানি এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞরাও এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। শারীরিকভাবে না হলেও অতিমারির কারণে শৈশব এবং কৈশোরের বৈকল্য ভবিষ্যৎ সমাজকে এক ভয়ঙ্কর প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখিন করবে। ছাত্রদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ অর্থাৎ জ্ঞ্যান অর্জন করা, তাতেও ফাঁকি যাচ্ছে বিস্তর। পরীক্ষা ব্যাতিত উচ্চতর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রজীবনের ওপর এক সুদূর প্রসারি ক্ষত রেখে যাবে। এর ফলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন পড়াশোনায় উৎসাহ হারাচ্ছে তেমনি পিছিয়ে পরা ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিকভাবে জীবন-জীবিকার সন্ধান পাচ্ছে না।
এই ভাবে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস আমাদের জীবনযাত্রাকে একেবারে ওলট পালট করে দিচ্ছে।

একজন ছাত্র হিসাবে এই মারণ ব্যাধির বিরুদ্ধে আমাদেরও যুদ্ধে নামতে হবে। কেবল মাত্র গৃহবন্দী হয়ে বিষাদের অতলে তলিয়ে না গিয়ে আমাদেরও উচিৎ, আশেপাশের মানুষকে সচেতন করা এবং আক্রান্তদের সুস্থ হতে সাহায্য করা। আমরাই পারি এই নিভৃতাবাসের সময়ে আরও ভাল করে পড়াশুনা করে এই রোগ থেকে মানবজাতিকে উদ্ধারের উপায় খুঁজে বের করতে। আজকের ছাত্রসমাজই আগামীর বৃহত্তর সমাজের ধারক ও বাহক হবে। তাই আমাদেরও দায়িত্ব এই অতিমারির কবল থেকে এই পৃথিবীকে উদ্ধার করে, তাকে আবার মানব সংসারের বাসভূমি হিসাবে সাজিয়ে তোলা। শুধু ভাইরাসের বিরুদ্ধে
লড়াই করে এই পৃথিবীকে বাঁচানো যাবে না, পৃথিবীকে সুন্দর ও রোগমুক্ত করতে হলে, আমাদের এই প্রকৃতিকেও তার সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে হবে। সহানুভূতিশীল হতে হবে এই পৃথিবীতে বসবাস্ কারী জীবকুলের প্রতি। পরিশেষে আমাদের এই প্রার্থনা যে, আমরা আবার স্বাভাবিক ছাত্রজীবন উপভোগ করব এই অতিমারির শেষে।

44

Adrish Hazra, Don Bosco School, Bandel

I reside at Chandannagar, Hooghly. I like to read books a lot ! Some of my favourite authors are: Satyajit Ray, Shirshendu Mukhopadhyay, Roald Dahl, Ruskin Bond, Jack London and many more. Listening to music and painting are my other hobbies. I’d like to thank my teachers and family for encouraging me to participate in this competition and the SKGCCL foundation for organizing it.

View All Authors >>

44 thoughts on “অতিমারি ও ছাত্রসমাজ”

  1. Pingback: porn
  2. Pingback: porn
  3. Pingback: child porn
  4. Pingback: child porn
  5. Pingback: child porn
  6. Pingback: child porn
  7. Pingback: football skills
  8. Pingback: web sitesi kurma
  9. Pingback: spam
  10. Pingback: porn
  11. Pingback: Konya SEO Uzmanı
  12. Pingback: porn
  13. Pingback: child porn
  14. Pingback: spam
  15. Pingback: meritking
  16. Pingback: porn
  17. Pingback: child porn
  18. Pingback: porn
  19. Pingback: iporn
  20. Pingback: child porn
  21. Pingback: child porn
  22. Pingback: porn
  23. Pingback: porn
  24. Pingback: spam
  25. Pingback: sex
  26. Pingback: child porn
  27. Pingback: fuck
  28. Pingback: porn
  29. Pingback: Cocuk pornosu
  30. Pingback: porn
  31. Pingback: child porn
  32. Pingback: ananın amı
  33. Pingback: animal porn
  34. Pingback: animal porn

Leave a Reply

Supported by:

skgf
skgf

Editor's Picks

Archive

Select a month to view the archive.

Back to Top