একজন ছাত্রী হিসেবে করোনা ভাইরাসের এই অতিমারীর সময়ে লকডাউন এবং তার পরবর্তী আনলক পর্ব ছাত্র সমাজের উপর কি প্রভাব ফেলেছে সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমি তুলে ধরছি। প্রথম প্রথম বেশ ভালো লাগত। স্কুল কলেজ সব বন্ধ, মনে হতো সারাদিন সিনেমা দেখে,মোবাইলে ,ল্যাপটপে গেমস্ খেলে সময় কেটে যাবে। কিন্তু যত সময় এগোতে লাগল, তত সবকিছুই কেমন একঘেয়ে মনে হতে লাগলো। একটা সময়ে পর তেমন একটা করার কিছুই ছিল না। তখন মনে হতে লাগলো যে কবে সবকিছু আবার আগের মতোন হবে। কবে আবার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে দেখা হবে। এর কিছু দিন পর থেকে শুরু হল অনলাইন ক্লাস। প্রথম দিকে খুব ভালো লাগতো মনে হতো যেন, এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো, মনে হতে লাগলো যে এটা একটা অভিশাপ হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। এটার যেমন ভালো দিক আছে তেমন খারাপ দিক ও আছে। এত দিন ধরে বিদ্যালয় গিয়ে,শিক্ষক শিক্ষিকার সামনে বসে পড়াশোনা করেছি। এই ব্যাপারটাই ছিল আলাদা। কোনো প্রশ্ন থাকলে সহজেই শিক্ষিকাদের সামনে থেকেই করতে পেরেছি। তারা খুব সুন্দরভাবে সামনে বসে বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু বর্তমানে তা সেই ভাবে সম্ভব হচ্ছে না, সবই হচ্ছে কিন্তু কিছু একটা যেন নেই। সেই স্কুলের ঘরটাও নেই, সামনে বোর্ড নেই।শুধু শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাচ্ছি তাও একটা কম্পিউটারের পর্দার ওপারে। এটা ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে খুবই কষ্টের। আমি যেন সেই দিনগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। এই অতিমারী পরিস্থিতির কিছু ভালো ও খারাপ দিক আছে, যদিও সেখানে ভালোর সংখ্যা কম, খারাপটাই বেশি। ভালো বলতে শুধু এটুকুই যে ঘরে বসে থেকে বাবা মা ও অন্যান্যদের সাথে একটা সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে।যেটা অন্য সময় হয়ে উঠত না ,এটা বাদে বেশির ভাগই আমার কাছে খারাপ,
কারণ মানুষের জীবন জীবিকা থেমে গেছে, দেশটা কেমন যেনো থমকে গেছে। প্রচুর মানুষ চাকরি হারিয়েছে। মানুষের আয়ও কমে গেছে। এর ফলে বেড়েছে অভাব ও অনটন।
এই করোনাকালে আমাদের ছাত্র সমাজের যে অপূর্ণ ক্ষতি হল তা বলে বোঝানো যায় না। স্কুলে গেলে যেখানে আট ঘন্টা ক্লাস হত, সেটা এখন অনলাইন পড়াশোনার ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। আগে স্কুলে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হত, কত গল্প হত আর কত খুনসুটিটাই না করেছি, এর মধ্যে একটা অন্যরকম ব্যাপার ছিল। বন্ধুদের সাথে টিফিনের সময় টিফিন ভাগ করে খাওয়া, কতক্ষণে সেই খাওয়া শেষ করে মাঠে খেলতে যাব সেটা ভাবতাম। আর এখন বন্ধুদের সাথে গল্প হয়ে ফোনে আর খেলা সেটাতো মোবাইলে। এটা কি একটা জীবন হল?
এটাতো গেলো একটা দিক। আমরা শহরের ছেলেমেয়েরা, যাদের কাছে একটা মোবাইল ফোন আছে, বাড়িতে ইন্টারনেট আছে, আমরা না হয় তাও সুন্দর ভাবে এই অনলাইন ক্লাস করতে পারছি। কিন্তু এমন অনেক গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রী আছে যাদের মোবাইল কেনার সামর্থ্য নেই আর ইন্টারনেট তো অনেক দূরের কথা। ঠিক একই রকম ভাবে প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় অর্থাভাবে পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সেইসব গরীব মেধাবী ছাত্রীর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন বাড়ীর লোক। তাহলে আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ভালো হলো কই?
এতক্ষণ বল্লাম ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার দিকটার কথা। এটা যেমন একটা দিক সেইরকমই আরেকটা দিক হলো ছাত্রছাত্রীরা বা আমরা এই অতিমারীর কালে অর্থাৎ এই করোনা কালে সমাজের কিছু উন্নয়ন মূলক কাজে নিজেদেরকে যুক্ত করতে পেরেছি।সমাজে এমন কিছু ব্যক্তি আছে যারা তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং স্বেচ্ছায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং তার পরিবারের সাহায্যের জন্য সব সময় এগিয়ে এসেছে। সব কিছুর মধ্যেও, এটা আমার কাছে একটা ভালো দিক বলে মনে হয়ে।
আমাদের মত ছাত্রছাত্রীরা এই সময় অনেক নিরন্নমানুষদের মুখে কিছু অন্যের সংস্থান করে দিতে পারছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজ বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্টিন খুলে নিজেদের সাধ্য মতো পয়সার ব্যবস্থা করে দুবেলা খাওয়ার বিতরণ করছে।বর্তমান মুহূর্তে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, যাদের কথা না লিখলেই নয় তারা হল “রেড ভলেন্টিয়ার্স”। এদের মধ্যে যেমন বড়রা আছে ঠিক একই ভাবে আছে ছাত্রসমাজ মানে আমরা। এই রেড ভলেন্টিয়ার্সরা যেকোনো প্রয়োজনে, যেকোনো মানুষের পাশে, যেকোনো সময় তা সে রাত তিনটের সময়ই হোক কি দুপুর বারোটাই হোক একটা ডাক পেলেই পৌঁছে যায়। তারা তাদের ক্ষমতা মত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা একটা খুব উল্লেখযোগ্য বিষয় ছাত্রসমাজের কাছে।এইরকম কিছু করতে পারাটা আমাদের কাছে খুবই ভালো কাজ বলে মনে হয়। কিন্তু এই সব কিছুর জন্য আমরা করোনা নামক রোগের সাহায্য চাই না। আমরা চাই করোনা মুক্ত পৃথিবী।আমরা চাই রোগমুক্ত সমাজ।এই রোগমুক্ত পৃথিবীতে আমরা এরকম আরো কিছু ভালো কাজ নিরন্তর করে যেতে চাই।
এখন শুধু আমরা অর্থাৎ ছাত্র সমাজ নয় প্রতিটি মানুষের মনে এখন এটাই চাওয়া যে এই পৃথিবী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাক। সব কিছু আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠুক। ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবা মার হাত ধরে স্কুলে যাক। আমরা যারা উঁচু ক্লাসে পড়ি তারাও যেনো আবার আগের মতো স্কুল যেতে পারি। এটা যদি না হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যত যে কোন অন্ধকারের দিকে তলিয়ে যাবে সেটা ভাবলেও বুকটা কেমন যেন করে ওঠে। সবশেষে গানের ভাষায় বলি ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে ।’
Wow, superb blog layout! How long have you been blogging for?
you make running a blog glance easy. The full look of your website is magnificent, as smartly as
the content material! You can see similar here sklep internetowy