আমরা মানুষ, এই পৃথিবীর বুকেই আমাদের বাস। আমাদের চারিদিকে ঘিরে আছে- গাছপালা, নদীনালা, সমুদ্র, পাহাড়, আলো-বাতাস। মাথার উপর আছে খোলা আকাশ। এই নিয়েই আমাদের পরিবেশ। দীর্ঘকাল ধরে মানুষ এই অনুকূল পরিবেশে সুখেই বাস করছে। শুধু মানুষ কেন সমগ্র জীবজগৎ এবং উদ্ভিদজগৎ এই পরিবেশের মধ্যে বাস করে। প্রাকৃতিক নিয়মে এই পরিবেশের মধ্যে যুগ যুগ ধরে ভারসাম্য রক্ষিত হয়ে আসছে বলে জীবকূল পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারছে। আমাদের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার একটি অনিবার্য সম্পর্ক আছে।
অথচ দুঃখের বিষয়, আমরা অনেকেই পরিবেশের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে, তার ভারসাম্য নষ্ট করে ,সেটির উপর করাঘাত হানি করি। পরিবেশের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার কারণে পরিবেশের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিকূলতা। বায়ু, জল, শব্দ, মাটি, গাছপালা ও বনপ্রাণী পরিবেশের, ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ মানুষের জীবন ধারণের অনুকূল জল, স্থল , শব্দ, বায়ুমণ্ডল কিভাবে অধিকমাত্রায় দূষিত হচ্ছে তা কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিলেই বোঝা যাবে। মানুষ যতদিন গ্রাম্যজীবন অভ্যস্ত ছিল, ততদিন পরিবেশ দূষণের মাত্রা ছিল কম। কিন্তু আজ অধিক সংখ্যক মানুষ নগর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের পরিবর্তনকালে এই দূষণের মাত্রা খুবই বেড়ে গেছে। মোটরচালিত দ্রুতগামী যানবাহন যেমন- অটোরিকশা, বাস, ট্যাক্সি, ইত্যাদির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছ। এইসব যানবাহন এবং অসংখ্য ছোটোবড়ো কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে তুলেছে। আবার কলকারখানার বর্জ্যপদার্থ নদী ও সমুদ্রে ফেলার ফলে নদী ও সমুদ্রের জল দূষিত ও স্নান ও পানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে কৃষিজমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মাটির স্বাভাবিক ধর্ম এবং উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। শব্দদানব তো আজকের দিনে একটি বৃহৎ সমস্যা রূপে দেখা দিয়েছে। যানবাহনের শব্দ, বাজি ও মাইকের আওয়াজে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে
উঠেছে। সব মিলিয়ে আমাদের পরিবেশ যে ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে , তাতে দেখা দিচ্ছে অতিবৃষ্টি , অনাবৃষ্টি। দেখা দিচ্ছে নানান ব্যাধি। এভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষেরা পরিবেশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের ফলে পরিবেশ অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনিরাপদ করে ফেলছে।
পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা বর্তমান পৃথিবীর বহুল আলোচিত একটি বিষয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুস্থ্যভাবে প্রাণের অস্তিত্য টিকিয়ে রাখতে পরিবেশ সংরক্ষন করা অত্যন্ত জরুরি। একমাত্র ছাত্রছাত্রীরা, এই সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মই পারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে সুন্দর দূষণমুক্ত সমাজ গঠনের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে। এ বিষয়ে তাদের কয়েকটি করণীয় কর্তব্যগুলো হল- প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষয়রোপনের মাধ্যমে তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। এর ফলে বাতাসে অক্সিজেন এবং কার্বনডাইঅক্সাইড এর সমতা বজায় থাকে। তারা “বিশ্ব পরিবেশ দিবস ” এবং “অরণ্য সপ্তাহ ” পালন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে, প্লাস্টিকজাতদ্রব্য কিভাবে পরিবেশকে ক্ষতি করে যে বিষয়ে তার চারপাশের মানুষকে অবহিত করা। পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা বয়সে তরুণ, অদম্য প্রাণশক্তিতে তারা ভরপুর, তারাই আগামী টিনের কান্ডারী।
মানুষের জীবনে পরিবেশের প্রভাব গভীর ও ব্যাপক। ক্ষুদ্র দলাদলি, স্বার্থচিন্তা, হিংসার মত্ততা, সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক ধূর্তামি- এ সব কিছুই অসুস্থ পরিবেশের অনিবার্য পরিণাম। আবার পরিবেশই এক অমিত শক্তির আধার। পরিবেশই উত্থান, পরিবেশই পতন। তাই পরিবার ও সমাজ পরিবেশ নিসর্গ পরিবেশের মতোই সবদিক থেকে আদর্শ ও সুষম না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানব শিশুর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তবু আমাদের প্রতিজ্ঞা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় উচ্চারিত হোক- ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’