Montage

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ সংরক্ষণ:

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ সংরক্ষণ:

আদিম কাল থেকে মানুষ তার জীবনযাপনের জন্য প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। মানুষ পরিবেশ থেকেই সংগ্রহ করেছে খাদ্য ও জল। প্রতিকূল অবস্থার থেকে রক্ষা পেতে পরিবেশেই খুঁজেছে আশ্রয়। মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের উপর মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে। প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার পরিবেশের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের উপরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। আধুনিক যুগে পরিবেশ দূষণ এই সমস্যাকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। আজকের দিনে মানুষের নানা কার্যকলাপের ফলে ঘটা পরিবেশের অবনতি মানবজাতির অস্তিত্বকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলেছে। এই সমস্যার কোনো সহজ সমাধান নেই। তবে, সবচেয়ে কার্যকরী যে উপায়টিকে মনে করা হয়, সেটি হল ‘সাস্টেনেবল্ ডেভেলপমেন্ট’। বিশ্বে যা প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তা সকল মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এর অপব্যবহার করলে অভাবের সৃষ্টি হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট সম্পদ বাকি থাকবে না। কেবলমাত্র এই সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহার দ্বারাই বর্তমানের চাহিদা মেটানো ও ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ দুই-ই সম্ভব।

পরিবেশের বর্তমান সংকটের বিষয়ে সচেতনতা আজকে খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গোটা বিশ্বে ‘সাস্টেনেবল্ ডেভেলপমেন্ট’-এর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করা হচ্ছে, এবং পরিবেশ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সভার আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে এই সব আইন ও পরিকল্পনার যথাযথ প্রয়োগে। এর মূল কারন এই যে, আজও মানুষ পরিবেশ-সংকটকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। আজকে পরিবেশ বিষয়ে মানুষ যাই সিদ্ধান্ত নিক না কেন, তার পরিণতি ভোগ করতে হবে পরবর্তী কালের নাগরিক, অর্থাৎ আজকের যুবসমাজকে। পরিবেশের অবনতি সবথেকে বেশি প্রভাবিত করবে তাদের জীবনকেই। তাই তাদের জীবনের মান নির্ভর করছে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের মত সমস্যার সমাধানের উপর। এইখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যুবসমাজের ভূমিকা। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বিস্তারের সাথে সাথে আজকের যুবসমাজ এই সব সমস্যার সঠিক গুরুত্ব বুঝতে শিখেছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে তরুণদের নিযুক্ত করা খুবই উপকারী হতে পারে। উপরন্ত, তরুণদের দ্বারা তাদের পরিবারের ও আশেপাশের মানুষদের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটানো সহজ হয়ে যায়।

আমরা পরিবেশ-সংরক্ষণকারী সংস্থায় যোগদান করে পরিবেশের জন্য কাজ করতে পারি, অথবা নিজেদের ছোট সংস্থা তৈরি করে নিজেদের আশেপাশের পরিবেশের উন্নতি করার চেষ্টা করতে পারি। নিয়মিত ভাবে রাস্তা-ঘাট, খেলার মাঠ, পুকুর ইত্যাদি পরিষ্কার করা, প্লাস্টিক, কাগজ ও কাঁচের জিনিস পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মত নানা কাজ এই সব সংস্থা করে থাকে। নিজেদের জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন এনেও পরিবেশের উন্নতির জন্য কাজ করা সম্ভব। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে, বোতল, কৌটো, ইত্যাদি ছোট জিনিসপত্র ফেলে না দিয়ে নতুন করে ব্যবহার করে এবং জল ও বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে কেবল পরিবেশেরই ভালো নয়, রোজকার খরচও কমানো সম্ভব। পরিবেশ-বান্ধব ও স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত দ্রব্য ব্যবহারও সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।

সাম্প্রতিক কালে পরিবেশের উন্নতির জন্য বিভিন্ন যুব-আন্দোলন দেখা গেছে। ২০০৫ সালে কানাডায় তৈরি হয়েছিল ‘ইউথ ক্লাইমেট মুভমেন্ট’ বা ওয়াই.সি.এম। আজকে ভারত সহ আরও ১০০ টি অন্যান্য দেশের যুব-সংস্থা এই মুভমেন্টের অংশ। ওয়াই.সি.এম -এর উদ্দেশ্য হল সমগ্র বিশ্বের যুবসমাজের মুখপাত্র হিসেবে পরিবেশ-সংকটের সমস্যাকে সরকার ও ইউনাইটেড নেশনস্-এর মত বিশ্ব-সংস্থার সামনে তুলে ধরা। আরও একটি উদাহরণ হল, যুব পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ২০১৮ সালে সুইডেনের নাগরিক ১৫ বছরের গ্রেটা একা সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে প্রতিবাদ করেছিল “স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট” লেখা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে। পরিবেশ-সংকটের বিরুদ্ধে তার ডাকা স্কুল-পড়ুয়াদের এই বনধ্ গোটা ইউরোপের ছাত্রসমাজকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ইউরোপের বিভিন্ন রাজ্যে হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীদের অসংখ্য মিছিল। তাদের দাবি ছিল, যেন সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তাৎক্ষনিক উদ্যোগ নেয়। ইউনাইটেড নেশনস্ ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্সে গ্রেটা বক্তৃতা দেওয়ার পরে ইউরোপের বাইরেও ছাত্রদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে দশ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবাদে যোগ দেয়।

কিন্তু ওয়াই.সি.এম ও গ্রেটা থুনবার্গের স্টুডেন্টস মুভমেন্টের এর সাফল্য সত্ত্বেও তরুণদের পরিবেশের জন্য কাজ করার পথে অনেক সমস্যা আছে। প্রথমেই আছে পরিবেশ-সংকট ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। এখনও সমাজের অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে সঠিক ভাবে সচেতন নয়। তাছাড়া সমাজের মানসিকতা, সংস্থানের অভাব ও সংগঠনের অভাব যুব সমাজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেসব জায়গায় যুব-সংস্থা উপস্থিত, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করা সমস্যাজনক হয়ে ওঠে। অধিকাংশ সময় সরকার ছোট সংস্থাগুলিকে স্বীকৃতি দেয় না। অতএব এদের কাজ সীমিত হয়ে থাকে।
এই কথা সত্যি যে, কোনো বৃহৎ পরিবর্তন সরকারের অথবা কোনো ক্ষমতাশালী সংগঠনের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। তরুণদের তাই মনে হতে পারে যে, তাদের হাতে আদৌ কোন ক্ষমতা নেই, এবং তারা পরিবর্তন আনতে পারবে না। কিন্তু সবথেকে বড় পরিবর্তন হল মানুষের মনোভাবের। সেই পরিবর্তন আনার জন্যেই আজকে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। একজোট হয়ে পরিবেশ-সংকটকে অগ্রাহ্য করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে এবং পরিবেশের উন্নতির জন্য উদ্যোগী হলে অবশ্যই পরিবর্তন সম্ভব।

112

Aradhya Roy, Shri Shikshayatan School

I’m interested in literature and art. I also enjoy music. Bengali is one of my favourite subjects.

View All Authors >>

112 thoughts on “ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ সংরক্ষণ:”

  1. Greetings! I knjow thiss is kind of off topoc bbut I was wondering whicxh blog platform aare
    youu using for tthis site? I’m getting sichk and tired off WordPress because I’ve had issues with hackers
    and I’m looking att alternatves for anotherr platform.
    I would bee great iif youu could point mee inn tthe directioon of a gokod platform.

  2. Hi there, just became aware of your blog through Google, and found that it is really informative.
    I’m gonna watch out for brussels. I’ll appreciate if you continue
    this in future. Numerous people will be benefited from your
    writing. Cheers!

Leave a Reply

Supported by:

skgf
skgf

Editor's Picks

Archive

Select a month to view the archive.

Back to Top