Montage

অতিমারী ও ছাএসমাজ

অতিমারী ও ছাএসমাজ

“ছাত্রাণাম অধ্যয়ণম তপঃ”- ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা-এই আপ্ত বাক্যটি সর্বজনগ্রাহ্য। অধ্যয়ণ না করলে কোন ছাত্রই ভবিষ্যতের যথার্থ নাগরিক হতে পারে না। তবে অধ্যয়ন সর্বস্ব জীবন যাপন করলে স্বার্থপরতা বাড়ে। সমাজের দরুন দুর্দিনে ছাত্রদেরই যে বড় প্রয়োজন পড়ে। তারাই আশার খনি, ভরসার স্থল। আজ সারা পৃথিবী জুড়ে ছোট্ট এক ভাইরাস তার করাল ছায়া বিস্তার করেছে। দিকে দিকে তার মৃত্যুজাল। লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েও এই করোনা ভাইরাস ক্ষান্ত হয়নি। এই ভাইরাস সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এমন বিপর্যস্ত করে ফেলেছে যে এই শতাব্দীতে এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব কিনা না তা বলা যাচ্ছে না। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রসমাজ। এই ভয়াবহ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও মানুষের প্রাণ রক্ষা করার জন্য সম্পূর্ণ লক্ডাউনের নির্দেশ দেন সরকার। শিক্ষার ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এই উপায়ে ঘরে বসে সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের থেকে ছাত্র ও ছাত্রীরা জ্ঞান আহরণ করতে পারছে। স্কুলের মতোই কিন্তু ভার্চুয়াল স্কুল করছে তারা ।

এর জন্য স্কুলে যাতায়াতের সময় বেঁচে যাচ্ছে। রাস্তার ধুলো ময়লা দূষণ থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে। তারা যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় তাদের প্রশ্নের উত্তর সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। কিন্ত যেমন সব কিছুরই একটি ভালো ও মন্দ দিক আছে তেমনই এই অনলাইন শিক্ষারও আছে। ছাত্ররা অনেকদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্ধুদের ও সহপাঠীদের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। খোলা মাঠে এক সাথে খেলা করা, খাবার ভাগ করে খাওয়া ও সাথীদের সঙ্গে খুনসুটি করা-এ সব তারা হারিয়ে ফেলেছে। অনেক শিশুরা অসামাজিক হয়ে পরেছে। এদের মনের অনাবিল আনন্দ কই আজ?

করোনা ভাইরাস একাকিত্ব ছড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র ছাত্রীদের জীবনে । দীর্ঘদিন এভাবে অনলাইন লেখাপড়া করতে গিয়ে বহু কিশোর ও কিশোরীর চোখ ও কানের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে ‘এটি হল অনলাইন ক্লাসের ‘কুফল”। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল নিরবিচ্ছন্নভাবে নেটওয়ার্ক পাওয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে, বিশেষ বিশেষ ক্লাস ছাত্র ও ছাত্রীরা করতে পারে না, অনলাইন পরীক্ষা দিতে গেলেও তাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সব সমস্যার জন্য আমার মতে এর থেকে অনেক ভালো ছিল ওপেন এয়ার স্কুল। ঠিক যেমন গুরুদেব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে উন্নত পরিবেশে আশ্রম বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে যদি পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যেত তবে শিক্ষার্থীদের অনেকাংশে উন্নতির রাস্তা প্রশস্ত হত। তবে রোগের ভয়ঙ্করতার কথা চিন্তা করে এ বিষয় থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। এই প্রাণঘাণী কোভিডের প্রার্দুভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার এই নাজেহাল অবস্থা মেনে নিতে হচ্ছে সকলকেই। প্রতিষেধক টিকা এসে পড়াতে আশা করছি শিক্ষা ব্যবস্থা আবার আশার আলো দেখতে পাবে অচিরেই। খোলা বাতাসে ঘরের বাইরের আনন্দটা তারা আবার ফিরে পাবে।

আরও একটি বিষয়ে আমাদের আলোকপাত করা প্রয়োজন। ঠিক কতগুলি স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে ও কতগুলিতে চলছে না তার হিসেব নেই। অনেক গরিব ছাত্র ছাত্রীরা স্মার্ট ফোন কিনতে না পারায় তারা ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা অজ্ঞানের অন্ধকারে রয়েছে। এসব কুফলের পরও তারা থেমে থাকেনি। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে ।

ছাত্রসমাজই তো দেশের ভবিষ্যত তাই তারা এই সময়ও দেশের জন্য ভাবছে।দেশের কল্যাণের জন্য দান ধ্যান করছে। তারা অসহায় ও স্থানহীন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি নির্বাক পশু ও পাখিদের খাওয়ার দিয়ে তাদের সাহায্য করছে। অনেক স্কুল দ্বারা আয়োজিত ডোনেশন ক্যাম্পে তারা ডোনেশন দিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রসমাজের দায়িত্ব অনুযায়ী তারা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও করেছে। তারা এখন আগেকার পৃথিবীটির জন্য ও তাদের হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনগুলোর অপেক্ষায় দিন গুনছে।

0

Annasha Das, Shri Shikshayatan School

My interest lies more in painting. I love to sketch. My other hobbies are dancing, writing essays, writing poems etc. I love to spend time with my family because I enjoy company of them. My dream is to become an IAS officer as I want to serve my country.

View All Authors >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 12 =

Supported by:

skgf
skgf

Editor's Picks

Archive

Select a month to view the archive.

Back to Top